জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - ঘরোয়া উপায়ে জন্ডিসের চিকিৎসা
জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। তবে জন্ডিস রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানাই অনেকেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়েন। আপনি যদি খুব সহজেই ঘরোয়া উপায়ে জন্ডিস রোগের লক্ষণও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
কারণ এই আর্টিকেলের মধ্যে জন্ডিস রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। খুব সহজে কিভাবে জন্ডিস রোগ চিহ্নিত করবেন এবং ঘরোয়া উপায়ে তার প্রতিকার করবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।
পেজ সুচিপত্র
জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কারণ জন্ডিস একটি মারাত্মক ব্যাধি। জন্ডিসের আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। খুব সহজেই জন্ডিস রোগের লক্ষণ গুলো চিহ্নিত করে এর প্রতিকার করা যায়। বর্তমানে খুব সহজেই জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: সহজে জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় জানুন
তবে জন্ডিস রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে জন্ডিস রোগ কেন হয়। জন্ডিস রোগ হওয়ার কারণ জানতে পারলে আমরা এ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে পারবো। এরপরে এর প্রতিকার হিসেবে জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হলে আমাদের কি খাওয়া উচিত এবং কি করা উচিত তা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
জন্ডিস রোগের কারণ কি
জন্ডিস হলো এমন একটি রোগ যেখানে রোগীর ত্বক চোখের সাদা অংশ, এবং প্রস্রাব হলদে রং ধারণ করে। এর মূল কারণ হলো বিলিরুবিন নামক পদার্থের অস্বাভাবিক মাত্রা বৃদ্ধি। বিলিরুবিন রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণে জমা হলে দেহে এই হলদে ভাব দেখা দেয়। জন্ডিস সাধারণত যকৃত (লিভার) এবং পিত্তনালীর সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। নিচে এর প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো:
লিভারের সমস্যা
- হেপাটাইটিস (Hepatitis): ভাইরাসজনিত লিভারের প্রদাহ।
- লিভার সিরোসিস: দীর্ঘদিনের ক্ষতির ফলে লিভারের কাঠামো পরিবর্তন।
- লিভার ফেইলিউর: লিভারের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়া।
পিত্তনালীর বাধা
- পিত্তনালীতে পাথর জমে যাওয়া (Gallstones)।
- পিত্তনালীর টিউমার বা ক্যান্সার।
- পিত্তনালীতে সংক্রমণ বা প্রদাহ।
রক্ত সম্পর্কিত কারণ
- হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া: রক্তের লোহিত কণিকা দ্রুত ভেঙে যাওয়া।
- ম্যালেরিয়া, থ্যালাসেমিয়া, বা অন্যান্য সংক্রমণজনিত রোগ।
নবজাতকদের জন্ডিস
নবজাতকদের মধ্যে বিলিরুবিন প্রসেস করার জন্য লিভার পর্যাপ্তভাবে পরিপক্ব না থাকায় জন্মের পর কিছুদিনের মধ্যে জন্ডিস হতে পারে। এছাড়াও মাদকদ্রব্য অথবা অ্যালকোহল গ্রহণের কারণেও জন্ডিস হয়ে থাকে।
বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
রক্তে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা সাধারণত 0.3 থেকে 1.2 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL) এর মধ্যে থাকে। যদি এই মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়, তখন জন্ডিসের লক্ষণগুলো দেখা দেয়। নিচে জন্ডিস নির্ণয়ের জন্য বিলিরুবিনের স্তর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
জন্ডিস নির্ণয়ের জন্য বিলিরুবিনের স্তর:
- 2-3 mg/dL: চোখের সাদা অংশ (স্ক্লেরা) হলুদ হতে শুরু করে।
- 3-7 mg/dL: ত্বক এবং অন্যান্য অংশেও হলুদভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
- >7 mg/dL: তীব্র জন্ডিস, যা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্যান্য উপসর্গ যেমন ক্লান্তি, বমি, এবং পেট ব্যথা দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন মাত্রা অনুযায়ী জন্ডিসের প্রকারভেদ:
- মৃদু জন্ডিস: 2-5 mg/dL
- মাঝারি জন্ডিস: 5-20 mg/dL
- তীব্র জন্ডিস: 20 mg/dL এর বেশি
নবজাতকদের ক্ষেত্রে বিলিরুবিনের সহনীয় মাত্রা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় ভিন্ন হয়। নবজাতকদের ক্ষেত্রে বিলিরুবিন 5-6 mg/dL এর বেশি হলে চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। যদি বিলিরুবিনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তবে এটি লিভারের গুরুতর সমস্যা বা পিত্তনালীর বাধা নির্দেশ করতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে এটি মারাত্মক হতে পারে।
জন্ডিস রোগের লক্ষণ কি কি
জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ হলো ত্বক, চোখের সাদা অংশ, এবং প্রস্রাবের হলদে রং ধারণ করা। তবে জন্ডিসের সঠিক লক্ষণ ও উপসর্গ ব্যক্তি ও কারণভেদে ভিন্ন হতে পারে। অনেকেই জন্ডিস রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে চান। তাই নিচে জন্ডিসের বিস্তারিত লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো।
জন্ডিস এর প্রধান লক্ষণ
জন্ডিস রোগের প্রধান কিছু লক্ষণ রয়েছে। এ সকল লক্ষণগুলো কোন রোগের মধ্যে দেখা দিলে বুঝে নিতে হবে সেই রোগীর জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে। জন্ডিস রোগের প্রধান লক্ষণ গুলো সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক কোন তথ্য জানা নেই। নিচে জনস্রোকের প্রধান লক্ষণ গুলো উল্লেখ করা হলো:
- চোখ ও ত্বকে হলুদভাব: চোখের সাদা অংশ (স্ক্লেরা) এবং ত্বকে হলুদ রঙ দেখা যায়।
- গাঢ় প্রস্রাব: প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা কমলা রং ধারণ করে।
- ফ্যাকাশে বা সাদা মল: মলে পিত্তের অভাবে রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
- অন্যান্য লক্ষণ ও উপসর্গ
- পেট ব্যথা: বিশেষ করে পেটের ডান পাশে, যকৃতের কাছে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- বমি ও বমি ভাব: বিশেষ করে লিভারের সমস্যা থাকলে।
- ক্ষুধামন্দা: খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া।
- গা চুলকানো: রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে চুলকানি হতে পারে।
- ওজন কমে যাওয়া: দীর্ঘস্থায়ী জন্ডিসে শরীরের ওজন কমতে থাকে।
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা: সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব করা।
- জ্বর: সংক্রমণজনিত কারণে হলে জ্বর হতে পারে (যেমন, হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে)।
জন্ডিসের প্রকৃতি অনুসারে লক্ষণ
জন্ডিসের প্রকৃতি অনুসারে জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়। বিভিন্ন প্রকৃতির জন্ডিস আমাদের মধ্যে হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে জন্ডিসের কারণে অনেক রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু রোগী রয়েছে যাদের খুব একটা ঝুঁকি থাকে না এবং সহজ চিকিৎসার মাধ্যমে তারা জন্ডিস থেকে রক্ষা পেতে পারে। নিচে প্রকৃত অনুসারে জন্ডিসের লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
- হেপাটাইটিস বা লিভারের প্রদাহ: জ্বর, পেট ফুলে যাওয়া, ক্লান্তি, এবং বমি।
- পিত্তনালীতে বাধা (গলস্টোন): তীব্র পেট ব্যথা এবং গা চুলকানো।
- হেমোলাইটিক জন্ডিস (রক্তকণিকার ভাঙন): রক্তশূন্যতা এবং দুর্বলতা।
নবজাতকদের জন্ডিসের লক্ষণ
নবজাতকদের জন্ডিসের লক্ষণগুলো আলাদা হয়ে থাকে। তবে খুব সহজেই নবজাতকের জন্ডিস রোগের লক্ষণ গুলো চিহ্নিত করতে পারবেন। নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ত্বক ও চোখে হলুদভাব (প্রথম ২-৩ দিনে দেখা যায়)।
- শিশু অতিরিক্ত নিদ্রালু বা খাওয়ায় অমনোযোগী হতে পারে।
- অত্যন্ত তীব্র হলে খিঁচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
লিভার জন্ডিসের লক্ষণ
লিভার জন্ডিস (Hepatocellular Jaundice) সাধারণত লিভারের অসুস্থতার কারণে হয়, বিশেষ করে হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস, বা ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি রোগের ফলে। এতে লিভার যথাযথভাবে বিলিরুবিন প্রসেস করতে পারে না, ফলে রক্তে বিলিরুবিন জমে গিয়ে জন্ডিস দেখা দেয়।
লিভার জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ
লিভার জন্ডিসের প্রধান কিছু লক্ষণ রয়েছে। এ সকল লক্ষণগুলো যে সকল রোগীর মধ্যে দেখা যাবে সে সকল রোগী লিভার জন্ডিসের আক্রান্ত বলে গণ্য হবে। খুব সহজে কিভাবে বুঝবেন লিভার জন্ডিস হয়েছে কিনা তার নিচে উল্লেখ করা হলো:
- চোখ ও ত্বক হলুদ হওয়া: প্রথমে চোখের সাদা অংশে (স্ক্লেরা) হলুদভাব দেখা যায় এবং পরে ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে।
- গাঢ় রঙের প্রস্রাব:প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ বা কমলা হয়ে যায়।
- মল ফ্যাকাশে বা সাদা রঙের: পিত্তের অভাবে মলের রং ফ্যাকাশে বা সাদা হয়ে যেতে পারে।
- পেটের ডান দিকে ব্যথা: যকৃতের অংশে (ডান পাঁজরের নিচে) ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয়।
এছাড়াও সারাদিন ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। সারাক্ষণ দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করা হলো লিভার জন্ডিসের অন্যতম প্রধান কারণ। লিভার জন্ডিসের আক্রান্ত হলে ক্ষুদাবান্ধা ও ওজন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এর ফলে আপনার খাওয়ার ওপরে রুচি একদম কমে যায় এবং ওজন কমে যায়।
জোর করে খেতে গেলে বমি অনুভব হতে পারে। বিশেষ করে খাবার শেষ করার পরে সাথে সাথে বমি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশ চুলকাতে পারে। এর কারণ হলো রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি অনুভব হয়। অনেক সময় রোগীর পেট ফুলে যেতে পারে।
একজন রোগীর লিভার জন্ডিসে আক্রান্ত হলে তার উচ্চ মাত্রায় জ্বর হতে পারে। তবে উচ্চ মাত্রায় জ্বরের পাশাপাশি নাক ও মাড়ি থেকে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। লিভারের কাজ ব্যাহত হলে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে যায়, ফলে নাক বা মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের অতি দ্রুত ডক্টরের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়াও মানসিক বিভ্রান্তি বা স্মৃতিভ্রংশ দেখা দিতে পারে। লিভারের তীব্র সমস্যা হলে টক্সিন জমে মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে, যা বিভ্রান্তি বা স্মৃতিভ্রংশ ঘটায়। একজন রোগীর মধ্যে এ সকল লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে জন্ডিস রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া অনেক সহজ।
জন্ডিস রোগের প্রতিকার
জন্ডিসের প্রতিকার মূলত এর কারণের উপর নির্ভরশীল। যেহেতু এটি কোনো নির্দিষ্ট রোগ নয়, বরং লিভার, পিত্তনালী বা রক্তের সমস্যার একটি লক্ষণ, তাই সঠিকভাবে রোগের কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা করতে হয়। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হলে রোগী খুব সহজেই সুস্থ হয়ে উঠবে। জন্ডিস রোগে চিকিৎসা গ্রহণে যদি দেরি হয় তাহলে রোগের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
জন্ডিসের চিকিৎসা ও প্রতিকার
চিকিৎসার মাধ্যমে জন্ডিসের প্রতিকার করা অনেক সহজ। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করলে জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জন্ডিস প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। নিচে বিভিন্ন পদ্ধতিতে জন্ডিস রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আপনার সুবিধামতো যে কোন একটি চিকিৎসার পদ্ধতি আপনি বেছে নিতে পারেন।
কারণনির্ভর চিকিৎসা
- হেপাটাইটিস: ভাইরাল হেপাটাইটিসে (যেমন, হেপাটাইটিস A, B, C) বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার এবং তরল পান করা জরুরি।
- হেপাটাইটিস B ও C-এর জন্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে।
পিত্তনালীর বাধা (Gallstones বা টিউমার):
- পিত্তনালীতে পাথর থাকলে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে তা অপসারণ করতে হয়।
- টিউমার থাকলে সার্জারি বা কেমোথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।
হেমোলাইটিক জন্ডিস
রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙে যাওয়ার জন্য ওষুধ এবং প্রয়োজনে রক্ত সঞ্চালন (Blood transfusion) করতে হতে পারে।
জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে চিকিৎসা
জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করে জন্ডিস রোগের চিকিৎসা করা যায়। তবে অনেকেই জানেন না জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে জন্ডিস রোগের চিকিৎসা করা যায়। তাই নিচে জীবনযাত্রা এবং সাদ্দা পাশের পরিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে জন্ডিস রোগের চিকিৎসা করা যায় তা সম্পর্কে নিজে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
- লিভার সুস্থ রাখতে কম তেল-মশলাযুক্ত এবং সহজপাচ্য খাবার খান।
- শাকসবজি, ফলমূল, এবং প্রচুর পানি পান করা উপকারী।
- অ্যালকোহল পরিহার: অ্যালকোহল লিভারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, তাই একেবারে বাদ দিতে হবে।
- লিভারের সমস্যা থাকলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, কারণ ক্লান্তি বাড়াতে পারে।
ওষুধ ও চিকিৎসা
- লিভারের প্রদাহ কমাতে ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বা প্রদাহনাশক ওষুধ সেবন করতে হবে।
- বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শে অন্যান্য ওষুধ দেওয়া হতে পারে।
- ইনট্রাভেনাস (IV) ফ্লুইড: পানিশূন্যতা দূর করতে এবং লিভারকে সহায়তা করতে ফ্লুইড সাপোর্ট প্রয়োজন হতে পারে।
নবজাতকের জন্ডিসের প্রতিকার
বর্তমানে নবজাতকের জন্ডিসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নবজাতকের জন্ডিসের পত্রিকার সম্পর্কে অনেকেই কিছু জানেন না। নবজাতকের জন্ডিসের পত্রিকার সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানাই অনেকেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়েন। যে সকল মাধ্যমে নবজাতকের জন্ডিস প্রতিকার করা যায় তার নিচে উল্লেখ করা হলো:
- নীল আলো দিয়ে শিশুর ত্বককে চিকিৎসা করা হয়, যা বিলিরুবিন ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে।
- প্রয়োজনে রক্ত পরিবর্তন (Exchange Transfusion):
- যদি বিলিরুবিনের মাত্রা খুব বেশি হয়, তবে রক্ত পরিবর্তন করা হতে পারে।
- হেপাটাইটিসের টিকা: হেপাটাইটিস B এবং A থেকে রক্ষা পেতে টিকা নেওয়া জরুরি।
- হাত ধোয়ার অভ্যাস: হেপাটাইটিস A-র সংক্রমণ এড়াতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি।
- পরিশোধিত পানি পান করা: বিশুদ্ধ পানি পান এবং দূষিত খাবার এড়িয়ে চলা।
জন্ডিসের কারণ লিভার ফেইলিউর, গলস্টোন বা রক্তের জটিলতা হতে পারে। তাই বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি হলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসাউন্ড/সিটি স্ক্যান করিয়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। তবে জন্ডিস প্রতিকারের জন্য যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ডাক্তারের পরিমনিয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চললে জন্ডিস থেকে সহজেই সুস্থ হওয়া সম্ভব।
ঘরোয়া উপায়ে জন্ডিস রোগের প্রতিকার
জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় লিভার সুস্থ রাখতে এবং উপসর্গ লাঘব করতে সহায়ক হতে পারে। নিচে জন্ডিসের জন্য কিছু কার্যকর প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া প্রতিকার উল্লেখ করা হলো:
- লেবু পানি পান করা: লেবু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে সহায়তা করে।
- ব্যবহার: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
- গাজরের রস ও বিটের রস: গাজর এবং বিটে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার থাকে, যা লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- ব্যবহার: প্রতিদিন ১ গ্লাস গাজর ও বিটের মিশ্র রস পান করুন।
- তুলসী পাতা (Holy Basil): তুলসী পাতা লিভারের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
- ব্যবহার: কয়েকটি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন বা তুলসী পাতা দিয়ে চা বানিয়ে দিনে ২-৩ বার পান করুন।
- আমলকি (Amla): আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C থাকে, যা লিভারকে সুরক্ষিত রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- ব্যবহার: প্রতিদিন আমলকি রস বা চূর্ণ খেতে পারেন।
- মধু ও হলুদ মিশ্রণ: হলুদে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে, যা লিভারের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
- ব্যবহার: ১ চা চামচ মধুতে সামান্য হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান।
- নারকেল পানি পান করা: নারকেল পানি শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করে এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে।
- ব্যবহার: প্রতিদিন ১-২ গ্লাস নারকেল পানি পান করুন।
- পুদিনা পাতা (Mint Leaves): পুদিনা হজমে সহায়ক এবং পিত্ত প্রবাহ উন্নত করে।
- ব্যবহার: পুদিনা পাতা দিয়ে চা তৈরি করে দিনে ২-৩ বার পান করুন।
- পেঁপে পাতা রস: পেঁপে পাতার রস হজমে সহায়তা করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- ব্যবহার: ১ চামচ পেঁপে পাতার রস দিনে ২ বার পান করতে পারেন।
জন্ডিসে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। পানিশূন্যতা এড়াতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি ও ফলের রস পান করুন। সহজপাচ্য খাবার যেমন: ভাত, সবজি, এবং ফলমূল বেশি খান। ভাজাপোড়া বা তেল-মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য: ডাল, চিড়া, ও দুধজাত খাবার খান তবে অ্যালকোহল ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এটা খুব সহজেই জন্ডিস রোগ প্রতিকার হবে।
জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট ওষুধের ধরন রোগের কারণের উপর নির্ভর করে। যেহেতু জন্ডিস নিজে কোনো রোগ নয়, বরং লিভার, পিত্তনালী, বা রক্তের অসুস্থতার লক্ষণ, তাই সঠিক কারণ চিহ্নিত করার পরই উপযুক্ত ওষুধ নির্ধারণ করা হয়। নিচে জন্ডিসের বিভিন্ন কারণ অনুযায়ী ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি দেওয়া হলো:
1. হেপাটাইটিসের জন্য ওষুধ
- ভাইরাল হেপাটাইটিস A/B/C:
- অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ (হেপাটাইটিস B/C):
- Tenofovir, Entecavir, Sofosbuvir, Ribavirin
- ইন্টারফেরন (Interferon): ভাইরাস দমনে সহায়তা করে।
- লিভার সাপোর্টিভ ওষুধ: যেমন Udiliv (Ursodeoxycholic acid) লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও হালকা খাবার খাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।
2. গলস্টোন বা পিত্তনালীর বাধার জন্য ওষুধ
- পিত্তনালীতে পাথর থাকলে প্রাথমিকভাবে ব্যথানাশক ওষুধ: যেমন Diclofenac বা Paracetamol।
- পাথর অপসারণের জন্য সার্জারি (যদি প্রয়োজন হয়)।
- Ursodeoxycholic acid (Udiliv): পিত্তনালীতে পিত্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে।
3. হেমোলাইটিক জন্ডিসের জন্য ওষুধ
- রক্তের লোহিত কণিকার দ্রুত ভাঙন হলে: ফোলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন B কমপ্লেক্স সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়।
- প্রয়োজনে স্টেরয়েড (Prednisolone) ব্যবহার করা হয়।
- গুরুতর ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালন (Blood transfusion) লাগতে পারে।
4. অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজের জন্য ওষুধ
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন E সাপ্লিমেন্ট: লিভারের সুরক্ষা প্রদান করে।
- Udiliv (Ursodeoxycholic acid): লিভারকে সাপোর্ট করে।
- স্টেরয়েড (Prednisolone): তীব্র প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়।
- অ্যালকোহল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে।
5. লিভার সাপোর্টিভ ওষুধ
- LIV-52: হেপাটোপ্রোটেকটিভ টনিক যা লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে।
- Silymarin (মিল্ক থিসেল): লিভার ডিটক্স করতে সহায়তা করে।
- Essentiale Forte: লিভারের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে ব্যবহৃত হয়।
- জন্ডিসের উপসর্গ লাঘবে ওষুধ
- Paracetamol: জ্বর বা ব্যথা কমাতে (তবে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এটি লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে)।
- Domperidone বা Ondansetron: বমি ভাব বা বমি কমাতে ব্যবহার করা হয়।
- Antihistamine (Cetirizine): গা চুলকানো কমাতে সাহায্য করে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ ভুল ওষুধ লিভারের অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে। রক্ত পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসাউন্ড করে জন্ডিসের সঠিক কারণ জানা জরুরি। জন্ডিসে ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি উপসর্গ গুরুতর হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
লেখকের মন্তব্য
জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে যারা কিছু জানেন না তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি। ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজে কিভাবে জন্ডিস রোগের প্রতিকার করা যায় তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলের মধ্যে। আপনি যদি ঘরোয়া উপায়ে জন্ডিস কিভাবে প্রতিকার করবেন তা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক সাহায্যজনক হবে।
comment url