ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - ম্যালেরিয়া কিভাবে বিস্তার লাভ করে
বাংলাদেশ ম্যালেরিয়া খুব মারাত্মক মারাত্মক একটি ব্যাধি। বাংলাদেশ ম্যালেরিয়া রোগ অনেক আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তবে অনেকেই ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে কিছু জানেন না। ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানাই অনেকেই চিন্তায় পড়ে যান। তবে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে ম্যালেরিয়া রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
যারা ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চান তারা সঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ এই আর্টিকেলের মধ্যে ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
অনেকেই জানতে চান ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ কি কি। আবার অনেকেই রয়েছেন যারা ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত তারা ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চান। ম্যালেরিয়া রোগের নির্দিষ্ট কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে এবং এর প্রতিকারও অনেক সহজে করা যায়। যারা ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চান তারা নিজের অংশটুকু মনোযোগ সহকারে করুন।
ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণুর নাম কি
ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণুর নাম হলো প্লাজমোডিয়াম (Plasmodium)। এই পরজীবী বিভিন্ন প্রজাতির হয়, যার মধ্যে মানুষের মধ্যে সাধারণত চারটি প্রজাতি ম্যালেরিয়া সৃষ্টি করে:
- Plasmodium falciparum (প্লাজমোডিয়াম ফালসিপারাম)
- Plasmodium vivax (প্লাজমোডিয়াম ভিভ্যাক্স)
- Plasmodium ovale (প্লাজমোডিয়াম ওভাল)
- Plasmodium malariae (প্লাজমোডিয়াম ম্যালেরিয়ি)
এর মধ্যে Plasmodium falciparum সবচেয়ে মারাত্মক এবং Plasmodium vivax সবচেয়ে বেশি প্রচলিত।
ম্যালেরিয়া রোগের কারণ
ম্যালেরিয়া রোগের প্রধান কারণ হলো প্লাজমোডিয়াম (Plasmodium) নামক পরজীবী, যা এনোফিলিস (Anopheles) প্রজাতির মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। মশাটি প্লাজমোডিয়াম পরজীবী বহন করে এবং কামড়ানোর সময় সেই পরজীবী রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। একবার প্লাজমোডিয়াম শরীরে প্রবেশ করলে এটি লিভার এবং রক্তের লাল কণিকাগুলোতে আক্রমণ করে, যা ম্যালেরিয়ার উপসর্গ সৃষ্টি করে। মূল উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:
- জ্বর
- ঠান্ডা লাগা
- মাথাব্যথা
- বমি বমি ভাব
- দুর্বলতা
সঠিক চিকিৎসা না করা হলে ম্যালেরিয়া বিশেষ করে Plasmodium falciparum সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে এবং জীবননাশের কারণ হতে পারে।
ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
নির্দিষ্ট কয়েকটি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে যে এই ব্যক্তি ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত। তবে অনেকেই জানেন না ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ কি কি। তবে ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অনেকে এ প্রতিকার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের চিন্তায় পড়ে যান। তাই আমাদের ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণের পাশাপাশি ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জানা দরকার।
আরো পড়ুন: ডেঙ্গু রোগের সহজ চিকিৎসা করে ৭ দিনে সুস্থ্য হন।
ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানাই অনেকেই অনেক আতঙ্কে থাকেন। তাই ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ
নির্দিষ্ট কয়েকটি লক্ষণের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া রোগ শনাক্ত করা যায়। ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত প্লাজমোডিয়াম পরজীবী শরীরে প্রবেশ করার ১০-১৫ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- হঠাৎ করে খুব তীব্র জ্বর দেখা দেয়, যা অনিয়মিত হতে পারে।
- শীত শীত অনুভূতি এবং ঠান্ডা লাগা সহ তীব্র কম্পন।
- জ্বরের পর প্রচণ্ড ঘাম হয়।
- তীব্র মাথাব্যথা অনুভূত হয়।
- খাবারের প্রতি অরুচি এবং বমি বা বমি বমি ভাব হতে পারে।
- শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অনুভূত হয়।
- শরীরে প্রচণ্ড দুর্বলতা ও ক্লান্তি দেখা দেয়।
- রক্তের লাল কণিকা ধ্বংস হওয়ার কারণে রক্তাল্পতা হতে পারে।
- কিছু ক্ষেত্রে পেট ব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
- মারাত্মক ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
Plasmodium falciparum সংক্রমণ হলে লক্ষণগুলো দ্রুত গুরুতর হয়ে উঠতে পারে এবং সঠিক চিকিৎসা না করলে মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিকার
অনেকেই অনলাইনে বিভিন্ন প্লাটফর্মে এসে ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জানার জন্য সার্চ করে থাকেন। তবে ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক তথ্য খুঁজে পান না। ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিকার এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু কার্যকরী পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
১. ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা
ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ঔষধ ব্যবহার করা হয়। সংক্রমণের ধরন এবং প্লাজমোডিয়ামের প্রজাতির ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা ভিন্ন হতে পারে। সাধারণ ঔষধগুলো হল:
- Plasmodium vivax এবং Plasmodium ovale-এর সংক্রমণে কার্যকর।
- Plasmodium falciparum-এর জন্য সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি।
- ম্যালেরিয়ার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে Plasmodium vivax এবং Plasmodium ovale সংক্রমণের ক্ষেত্রে।
২. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, যেমন:
- মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার করা খুবই কার্যকর।
- মশার কামড় এড়াতে মশা তাড়ানোর ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করা।
- শরীর সম্পূর্ণ ঢেকে রাখার জন্য দীর্ঘ হাতা এবং পায়জামা পরা উচিত।
- ঘরের ভেতর মশা নিধনের জন্য নিয়মিত ইনডোর স্প্রে বা ফগিং করা।
- পানি জমে থাকা জায়গাগুলোতে মশার লার্ভা ধ্বংস করার ব্যবস্থা নেওয়া, যেমন পানি নিষ্কাশন করা বা লার্ভা মারার ঔষধ ব্যবহার করা।
৩. প্রতিরোধমূলক ঔষধ গ্রহণ
ম্যালেরিয়া-প্রবণ এলাকায় ভ্রমণের আগে প্রফিল্যাক্সিস ঔষধ (prophylaxis medication) গ্রহণ করা যেতে পারে, যা ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। উদাহরণস্বরূপ:
- সংক্রমণ রোধে ভ্রমণের আগে ও পরে গ্রহণ করা হয়।
- ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকর।
- ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত একটি ঔষধ।
৪. সচেতনতা বৃদ্ধি
ম্যালেরিয়া-প্রবণ এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। মশার কামড় থেকে কীভাবে বাঁচা যায় এবং প্রাথমিক লক্ষণগুলো কীভাবে চেনা যায়, তা জানানো গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা না করালে ম্যালেরিয়া মারাত্মক আকার নিতে পারে, তাই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ম্যালেরিয়া রোগের বিস্তার পদ্ধতি
ম্যালেরিয়া রোগের বিস্তার প্রধানত এনোফিলিস (Anopheles) প্রজাতির স্ত্রী মশার মাধ্যমে ঘটে। ম্যালেরিয়া বিস্তারের প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত ধাপগুলোর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়:
মশার কামড়ের মাধ্যমে সংক্রমণ: যখন এনোফিলিস মশা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন মশাটি সেই ব্যক্তির রক্তের সঙ্গে প্লাজমোডিয়াম পরজীবী শোষণ করে। মশার দেহে এই পরজীবী বৃদ্ধি পায় এবং মশার লালা গ্রন্থিতে (salivary glands) স্থানান্তরিত হয়।
মানুষকে কামড়ানোর সময় সংক্রমণ: এরপর মশাটি যখন অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন মশার লালা দিয়ে প্লাজমোডিয়াম পরজীবী সেই ব্যক্তির রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে। এভাবেই নতুন একজন ব্যক্তির মধ্যে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ ঘটে।
প্লাজমোডিয়ামের শরীরের ভেতরে ছড়িয়ে পড়া: রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে প্লাজমোডিয়াম প্রথমে যকৃতে (liver) প্রবেশ করে এবং সেখানে বৃদ্ধি পায়। এরপর এটি লাল রক্তকণিকায় (red blood cells) আক্রমণ করে, যেখানে এটি সংখ্যায় বাড়তে থাকে এবং রক্তকণিকা ধ্বংস করে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে, যার ফলে ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।
সংক্রমণের চক্র: মশা যখন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির রক্ত শোষণ করে, তখন এটি আবার সংক্রমিত হয় এবং নতুন মানুষকে কামড়ানোর মাধ্যমে রোগ ছড়িয়ে দেয়। এভাবে ম্যালেরিয়া একটি চক্রের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে।
রক্ত সঞ্চালন বা সংক্রমিত সুই থেকে সংক্রমণ: যদিও প্রধানত মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া ছড়ায়, কিছু ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত ব্যবহার করলে (যেমন রক্তদান) বা ব্যবহৃত সংক্রমিত সুইয়ের মাধ্যমে সরাসরি সংক্রমণ ঘটতে পারে। তবে এ ধরণের সংক্রমণ খুব বিরল।
মাতৃগর্ভে সংক্রমণ: কিছু ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত মা গর্ভাবস্থায় শিশুর মধ্যে ম্যালেরিয়া ছড়াতে পারে। একে Congenital Malaria বলা হয়।
লেখকের মন্তব্য
ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হলে রোগীরা অনেক আতঙ্কের মধ্যে থাকে। ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তাই এই আর্টিকেলের মধ্যে ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি ম্যালেরিয়া রোগের রক্ষনো প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
comment url