গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত - গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কি
গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত? গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খেলে বাচ্চার স্বাস্থ্য এবং বাচ্চার মায়ের স্বাস্থ্য দুটি ভালো থাকে? গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত নয়? এ ধরনের আরো অনেক প্রশ্ন গর্ভবতী অবস্থায় গর্ভবতী মায়ের মাথায় আসে। গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অনেকেরই জানা নেই।
তাই এই আর্টিকেল এর মধ্যে গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত তা সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
গর্ভবতী অবস্থায় মাকে অনেক সাবধানে থাকতে হয়। অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয় এবং নির্দিষ্ট একটি রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিনের খাবার খেতে হয়। তবে গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত এবং কি কি খাওয়া উচিত নয় এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানাই অনেকেই অনেক ভুল করে বসেন। নিচে গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হতে পারে
গর্ভবতী মায়ের জন্য সঠিক পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মা ও শিশুর উভয়ের সুস্থতা নিশ্চিত করে। একটি সুষম খাবার তালিকা গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক। এখানে একটি উদাহরণ খাবার তালিকা দেওয়া হলো যা একজন গর্ভবতী মায়ের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সহায়ক হতে পারে:
আরো পড়ুন: সহজে চিকন স্বাস্থ্য মোটা করুন মাত্র ২০ দিনে।
সকালের নাস্তা: সকালে আপেল, কলা, পেয়ারা, পেঁপে ইত্যাদি মিশিয়ে খেতে পারেন। ওটস বা কর্নফ্লেক্সের সাথে দুধ খাওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন সকালে সিদ্ধ বা ভাজা ডিম খাওয়া যেতে পারে। এক চামচ মধু ও কয়েকটি বাদাম। তাজা ফল বা কম চিনি দেওয়া ফলের জুস ও খাওয়া যাবে।
দুপুরের খাবার: দুপুরে সম্পূর্ণ শস্যের চাল বা আটা দিয়ে তৈরি রুটি খেতে হবে। মুরগি, মাছ, ডাল বা মটরশুঁটি খাওয়া যাবে। এছাড়াও সবজি হিসেবে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ব্রকলি, পালংশাক ইত্যাদি খাওয়া যাবে। খাওয়া শেষে এক কাপ দই খাওয়া যেতে পারে।
বিকেলের খাবার: বিকেলে কাঠবাদাম, কাজু, আখরোট, খেজুর ইত্যাদি জাতয়ি শুকনা খাবার খেতে পারেন। বিভিন্ন রকমের সবজি দিয়ে তৈরি স্যুপ খেতে পারেন।
রাতের খাবার: রাতে সীমিত পরিমাণে চাপাটি বা ভাত খেতে পারেন। তরকারি হিসেবে ডাল বা মুরগির স্যুপ খান। সবুজ শাকসবজিও খাওয়া যাবে। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ খাওয়া যেতে পারে।
গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত
গর্ভবতী অবস্থায় মায়ের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য থাকা উচিত। কারণ বাচ্চা এবং বাচ্চার মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক পুষ্টি প্রয়োজন। তবে অনেকেই জানেন না গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত। গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত তা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের পয়েন্ট গুলো পড়ুন।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়া মায়ের ও শিশুর উভয়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ফল ভিটামিন, মিনারেল, আঁশ, ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে যা গর্ভাবস্থায় জরুরি পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে। এখানে কিছু ফলের তালিকা দেওয়া হলো যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত:
গর্ভবতী অবস্কথায় বিভিন্ন ধরণের ফল খাওয়া যেতে পারে। যেমন, কলায় পটাসিয়াম, ভিটামিন B6, ভিটামিন C এবং আঁশের ভালো উৎস। এটি গর্ভবতী মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে এবং বমি বমি ভাব কমাতে সহায়ক। আপেলে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, ভিটামিন C, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি হজমের জন্য ভালো এবং শিশুর ইমিউন সিস্টেম গঠনে সহায়ক।
কমলাতে ভিটামিন C, ফোলেট, এবং পানি রয়েছে যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের উন্নয়নে সহায়ক। আঙ্গুরে রয়েছে ফোলেট, ভিটামিন K, ভিটামিন C, এবং আঁশ। এটি কোষের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং গর্ভকালীন ক্লান্তি কমাতে সহায়তা করে।
পাকা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C এবং আঁশ রয়েছে যা হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায় এবং পেট ফাঁপা কমাতে সাহায্য করে। তবে, কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। বেরিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন C, এবং আঁশ থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষ রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে।
নাশপাতিতে ফোলেট, পটাসিয়াম, এবং আঁশ রয়েছে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আমে রয়েছে ভিটামিন A এবং C। ভিটামিন A শিশুর চোখ এবং ত্বকের জন্য খুবই জরুরি, এবং ভিটামিন C রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ডালিমে ফোলেট, ভিটামিন K, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত উপকারী। এটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক এবং শিশুর হাড়ের গঠন উন্নত করতে পারে।
কিউইতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C, ভিটামিন E, এবং পটাসিয়াম রয়েছে। এটি গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে। প্রতিদিন ২-৩ ধরনের তাজা ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং ফল খাওয়ার সময় ফল ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না
গর্ভবতী অবস্থায় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য খাওয়ার পাশাপাশি অনেকগুলো খাদ্য রয়েছে যেগুলা থেকে দূরে থাকতে হবে। এমন অনেক খাদ্য আছে যেগুলো গর্ভবতী অবস্থায় খাওয়া যাবে না। তবে অনেকে জানে না গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাদ্য খাওয়া যাবে না। গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না তা সম্পর্কে কিছু না জানাই অনেকেই যে সকল খাদ্য খাওয়া যাবেনা তাকে থাকেন। গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া যাবেনা তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কিছু মাছ খাওয়া উচিত নয় কারণ এগুলোতে উচ্চ মাত্রার মার্কুরি এবং অন্যান্য টক্সিন থাকতে পারে। যেসকল মাছগুলো এড়িয়ে চলা উচিত সেগলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে হাঙর। এই মাছে মার্কুরি খুব বেশি থাকে। রাজা মাকরেল মাছে মার্কুরির উচ্চ মাত্রায় থাকে। বড় সী বেস মাছ খাওয়া যাবে না কারণ এতে মার্কুরি থাকতে পারে।
এছাড়াও আরো যেসকল মাছ খাওয়া যাবে না সেগুলো হলো: কিংফিশ, টাইলফিশ, পম্পানো, বিশেষ কিছু সেলফিশ ও কাঁকড়া। গর্ভাবস্থায় এসকল মাছগুলো খাওয়া উচিত না। গর্ভাবস্থায় এসকল মাছগুলো খেলে অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উত্তম।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কিছু সবজি খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এগুলো গর্ভবতী মায়ের বা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিচে কিছু সবজির তালিকা দেওয়া হলো যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়:
- কাঁচা বা আধা-পাকা পেঁপে: এটি পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে।
- কাঁচা টমেটো: কাঁচা টমেটোতে কিছু বিষাক্ত উপাদান থাকতে পারে, তাই রান্না করা টমেটো খাওয়া ভালো।
- কাঁচা রসুন ও পেঁয়াজ: যদিও সাধারণভাবে হালকা পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া এড়ানো উচিত।
- অতিবৃদ্ধ শাকসবজি: এগুলো পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- বাঁধাকপি: এটি গর্ভাবস্থায় কিছু মহিলার জন্য হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- আলু: কাঁচা আলুতে সোলানাইন নামক টক্সিন থাকতে পারে।
- মাশরুম কাঁচা: কাঁচা মাশরুম খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, তবে রান্না করলে নিরাপদ।
গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যেতে পারে। লেবুতে ভিটামিন C, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা মায়ের ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়ায়ও উপকারে আসে। গর্ভাবস্থায় লেবু খেলে বিভিন্ন ধরণের উপকার হতে পারে। লেবু খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়। লেবু পানির সাথে খেলে হজমে সাহায্য করে।
এছাড়াও লেবুতে ভিটামিন C থাকায় শিশুর ইমিউন সিস্টেমে অনেক সহায়তা করে। এটি ক্লান্তি কমাতে এবং শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু খাওয়া এড়ানো উচিত, কারণ এটি পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। লেবুর রস বেশি acidic হতে পারে, তাই এটা দাঁতের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে; তাই দাঁত ব্রাশ করার আগে লেবুর রস খাওয়া পরিহার করা ভালো।
লেখকের মন্তব্য
গর্ভবতী অবস্থায় মাকে অনেক সচেতন থাকতে হয়। কারণ একটু অসচেতন হলেই অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। গর্ভবতী অবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানায় অনেকেই অনেক ভুল খাদ্য খেয়ে ফেলেন। তাই এই আর্টিকেল এর মধ্যে গর্ভবতী অবস্থায় কি খাওয়া উচিত এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক সাজানো হবে।
comment url