কিভাবে বিকাশ একাউন্ট খুলব - বিকাশে লেনদেন চার্জ কত
বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে বিকাশ হলো সব থেকে সেরা মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম। বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম হিসেবে বিকাশ এর ওপর বেশি ভরসা করে। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল প্রান্তের মানষ মোবাইল ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং কে বেছে নিয়েছে।
সারা বাংলাদেশের সকল প্রান্তে বিকাশ এজেন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ছোট বড় সকলেই এখন বিকাশ এর ওপর আস্থা রাখছে। তাই নিচে বিকাশ একাউন্ট খোলার সকল নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভূমিকা
দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে নিমিশের মধ্যে টাকা পাঠানো যায় বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমে। দেশ থেকে বিদেশে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠোনো এখন অনেক সহজ। বর্তমানে বাংলাদেশে বিকাশ এর ব্যাবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে প্রচলিত সকল মোবাইল ব্যাংকিং এর মধ্যে বিকাশ সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য।
আরো পড়ুন: অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য ঘরে বসে আবেদন করুন
এই কারণে সকলেই বিকাশ একাউন্ট খুলতে চায়। তবে অনেকেই জানেন না কীভাবে বিকাশ একাউন্ট খুলতে হয়। বিকাশ একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে। তাই এই আর্টিকেলের মধ্যে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বিকাশ কী
বিকাশ হলো একটি ডিজিটাল ফিন্যান্স সেবা। এটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অনলাইনে টাকা পাঠানোর সুবিধা প্রদান করে। বাংলাদেশের একটি খুব জনপ্রিয় পেমেন্ট সিস্টেম হলো বিকাশ। বিকাশ এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের লেনদেন সহজে সম্পন্ন করা যায়। মোবাইল রিচার্জ, বিল পরিশোধ, ইন্টারনেট প্যাকেজ ক্রয়, অনলাইন শপিং এবং অন্যান্য অনলাইন লেনদেনের জন্য বিকাশ খুবই জনপ্রিয় একটি অ্যাপ।
এছাড়াও বিকাশে টাকা ট্রান্সফার করা যায়। একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারেন বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারেন। এটি ব্যবহারকারীদের টাকা পাঠানোর জন্য নাগরিকদের নিরাপদ এবং সহজ একটি অপশন প্রদান করে। এটি স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন, ইউএসএসডি বিকাশ মেন্যু বা বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা যায়।
বিকাশ একাউন্ট খুলতে কী কী লাগে
বিকাশ একাউন্ট খুবই নির্ভরযোগ্য। যে কোন ধরণের লেনদেন সম্পূর্ণ করার খেত্রে বিকাশে কেউ প্রতারিত হয় না। এই কারণে সকলে বিকাশ একাউন্ট খুলতে চায়। বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও আপনার ফোন নম্বর এবং আরো অনেক কিছু প্রয়োজন হয়। অনেকেই জানেন না বিকাশ একাউন্ট খুলতে কি কি প্রয়োজন। বিকাশ একাউন্ট খুলতে যা যা লাগে তা নিচে দেওয়া হলো।
মোবাইল নম্বর: বিকাশ একাউন্ট খুলতে অবশ্যই আপনার নিজের NID দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড হতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র: আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে যাতে আপনার নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, সম্পূর্ণ ঠিকানা এবং আপনার ছবি থাকে। এছাড়াও আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট ইত্যাদিও ব্যাবহার করতে পারেন।
বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য আপনার আর কিছুর প্রয়োজন হবে না। তবে আপনি চাইলে একটি ভ্যালিড ইমেইল দিতে পারেন। এছাড়াও আপনার যদি কোন ব্যাংক একাউন্ট থাকে তাহেলে সেখান থেকে বিকাশে টাকা ট্রান্সফার করার জন্য ক্রেডিট কার্ড অ্যাড করে নিতে পারেন।
বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
বাংলাদেশে যে সকল মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম রয়েছে তার মধ্যে বিকাশ অন্যতম। এর কারণ হলো বর্তমান সময়ে আপনি ঘরে বসেই টাকা লেনদেন করতে পারছেন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরণের বিল পেমেন্ট করতে পারছেন। এই কারণে এখন বাংলাদেশের সকল প্রান্তের মানুষ বিকাশ একাউন্ট খুলতে চাইছেন। তবে অনেকেই জানেন না কীভাবে বিকাশ একাউন্ট খুলতে হয়। নিচে বিকাশ একাউন্ট খোলার সঠিক নিয়ম উল্লেখ করা হলো।
- প্রথমে আপনার মোবাইলে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করে ওপেন করুন।
- বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করে একাউন্ট খুলুন বাটনে ক্লিক করুন।
- আপনার সামনে একটি ফর্ম আসবে। এখানে আপনার নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেইল ঠিকানা প্রদান করুন।
- আপনার পরিচিতির কাগজপত্র সহ নাম ঠিকানা এবং ছবি সম্পূর্ণ হতে হবে।
- এরপর আপনার নম্বরে পাঁচ ডিজিটের একটি কোড যাবে। কোডটি বসান।
- এরপর বিকাশ ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আপনার তথ্য যাচাই করে আপনার একাউন্ট সচল করে দিবে।
- এরপর বিকাশ একাউন্টের জন্য পিন সেট করতে হবে।
অ্যাপ ছাড়া বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
অনেকেই স্মার্ট ফোন ব্যাবহার করেন না। যারা বাটন মোবাইল ব্যাবহার করেন তারা অনেক সহজেই বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন। অ্যাপ ছাড়াও বিকাশ একাউন্ট খোলা যায়। তাবে অনেকেই জানেন না অ্যাপ ছাড়া বাটন মোবাইলে কীভাবে বিকাশ একাউন্ট খুলবেন। নিচে বাটন মোবাইলে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম দেওয়া হলো:
- আপনার মোবাইল থেকে *247# ডায়াল করুন।
- এরপর আপনার বিকাশ এর পিন নম্বর সেট করুন। (আপনার সিমটি অবশ্যই ভ্যালিড আইডি কার্ড দ্বারা রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে।
- এরপর বিকাশ একাউন্টে ক্যাশ ইন করে ব্যাবহার করুন।
অনলাইন ছাড়া বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
অনলাইন ছাড়া বিকাশ এজেন্ট পয়েন্টে গিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলা যায়। যারা নিজে বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারেন না তারা যে কোন বিকাশ এজেন্ট পয়েন্টে গিয়ে একাউন্ট খুলতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে আপনার আইডি কার্ড এবং ২ কপি ছবি নিয়ে বিকাশ এজেন্ট পয়েন্টে গেলে এজেন্ট আপনার একাউন্ট খুলে দিবে।
বিকাশ এর সুযোগ সুবিধা
বিকাশ হলো বাংলাদেশের একটি মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম যা মুদ্রা সেবা প্রদান করে। এটি বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের বিল পরিশোধ থেকে বেতন প্রাপ্তি পর্যন্ত বিভিন্ন অনলাইন লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের লেনদেন সহজে করা যায় এবং এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। বিকাশের সুযোগ সুবিধাগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
অ্যাকাউন্টে টাকা জমা ও তোলা: বিকাশে একাউন্টে টাকা জমা করা এবং সেই টাকা অন্য বিকাশ ব্যবহারকারীদের কাছে পাঠানো সহজ।
বিল পরিশোধ: বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধ করা যায়, যেমন বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল, মোবাইল রিচার্জ ইত্যাদি।
দোকানে থেকে দোকানে টাকা পাঠানো: বিকাশ মাধ্যমে এক দোকানে থেকে অন্য দোকানে সরাসরি টাকা পাঠানো যায়।
বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার: বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন লেনদেন করা যায়, যেমন বিল পরিশোধ, টাকা পাঠানো ইত্যাদি।
বেতন প্রাপ্তি: অনেক কোম্পানিগুলি বেতন প্রাপ্তির জন্য বিকাশ ব্যবহার করে।
অনলাইন শপিং: অনেক অনলাইন শপে বিকাশ পেমেন্ট গ্রহণ করে।
অনলাইন অর্ডারের জন্য টাকা জমা: অনলাইন শপিং করার সময় বিকাশ একাউন্টে টাকা জমা করে অর্ডার দেওয়া যায়।
বিকাশে সার্ভিস চার্জ ও লেনদেন ফি
বিকাশ এর মধ্যেমে লেনদেন করলে বা যেকোন ধরণের বিল পরিশোধ করলে প্রতিটি লেনদেনের জন্য আলাদা ফি প্রযোয্য। তবে অনেকেই জানেন না কোন সার্ভিসের জন্য কত টাকা চার্জ করা হয়। নিচে প্রতিটি সার্ভিসের চার্জ উল্লেখ করা হলো।
ক্যাশ আউট চার্জ: বিকাশ থেকে এজেন্ট পয়েন্টে ক্যাশ আউট করলে প্রতি হাজারে ১৮.৫০ টাকা চার্জ প্রযোয্য। তবে প্রয় নম্বরে ক্যাশ আউট করলে প্রতি হাজারে ১৪.৯০ টাকা চার্জ করা হয়।
সেন্ড মানি চার্জ: বিকাশ থেকে সেন্ট মানি করলে প্রতি হাজারে ৫ টাকা চার্জ করা হয়। তবে এক মাসে ৫০ হাজার টাকার বেশি সেন্ড মানি করলে প্রতি হাজারে ১০ টাকা চার্জ করা হয়। তবে এক মাসে প্রিয় নম্বরে ২৫০০০ টাকা পর্যন্ত সেন্ড মানি ফ্রি।
এটিএম থেকে বিকাশে ক্যাশ আউট চার্জ: এটিএম বুথ থেকে বিকাশে ক্যাশ আউট করলে প্রতি হাজারে ১৪.৯০ পয়সা ক্যাশ আউট চার্জ করা হয়।
বিকাশ ব্যাবহারে সতর্কতা
বিকাশ ব্যবহারে সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে অনেক ব্যাবহারকারী বিভিন্ন ভাবে প্রতারিত হচ্ছে। বিশেষ করে বিকাশ কাস্টমার কেয়ার এর নামে ফেক ফোন কল দিয়ে ব্যাবহারকীর থেকে সকল তথ্য গ্রহণ করে তাদের টাকা টুলে নেওয়া হচ্ছে। বিকাশ থেকে কল দিয়ে আপনার কোন তথ্য যাচাই করে না। তাই এই ধরণের ফোন কল থেকে সতর্ক থাকুন। এছাাড়ও কিছু মূল সতর্কবার্তা দেওয়া হলো:
অনুমোদিত সেবা ব্যবহার করুন: শুধুমাত্র অনুমোদিত বিকাশ সেবা ও বিকাশ এজেন্ট পয়েন্ট থেকে সেবা গ্রহণ করুন।
আধিকারিক সুপারিশকৃত অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন: বিকাশের সঠিক অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। গুগল প্লে-স্টোর থেকে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
সুরক্ষিত নেটওয়ার্ক ব্যবহার করুন: জনগণের অব্যাহত নেটওয়ার্ক ব্যবহার করুন যেন আপনার তথ্য সুরক্ষিত থাকে।
প্রতিদিনের অবস্থা পরীক্ষা করুন: আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টের সত্যায়িত সংখ্যা, লেনদেন হিসাব, ইত্যাদি নিয়ে নিজের অবস্থা পরীক্ষা করুন।
অবাঞ্ছিত ইমেল বা মেসেজ যাচাই করুন: যেকোনো সন্দেহজনক বা অবাঞ্ছিত ইমেইল বা মেসেজ পেলে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
পাসওয়ার্ড এবং পিন সংরক্ষণ করুন: আপনার পাসওয়ার্ড এবং পিন গোপন রাখুন এবং অন্যান্য সকল একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড থেকে আলাদা রাখুন।
লেখকের মন্তব্য
বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম হিসেবে বিকাশ বেশি ব্যাবহার করছে। বিকাশ বাংলাদেশে অনেক বিশ্বস্ত একটি মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম। এই কারণে বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষ এর ওপর আস্থা রাখছে। দিন দিন বিকাশ এর ব্যাবহার বেড়েই চলেছে। তাই এই আর্টিকেলের মধ্যে বিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
comment url