অনলাইনে আমি প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম
বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য বিদেশে পাড়ি জমাতে চায়। তবে বিদেশে যাওয়া সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে মানুষ বিভিন্নভাবে প্রতারিত হয়। বাংলাদেশে অনেক দালাল রয়েছে যারা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বসে থাকে। তবে বর্তমানে যারা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমাতে চান তাদের কোন সমস্যায় পড়তে হবে না। এর কারণ হলো বাংলাদেশে সরকার আমি প্রবাসী নামক একটি অ্যাপ লঞ্চ করেছে।
যারা বিদেশে পাড়ি জমাতে ইচ্ছুক তাদের আমি প্রবাসী অ্যাপ এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আমি প্রবাসী অ্যাপ এর মাধ্যমে কোন ধরনের দালালের সহযোগীতা ছাড়াই বিদেশে যাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। তবে অনেকেই জানেন না কীভাবে আমি প্রবাসী অ্যাপ এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করবেন। তাই নিচে আমি প্রবাসী অ্যাপ এ রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ভূমিকা
অনেকেই জানেন না অনলাইনে আমি প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করতে হয়। আমি প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানায় অনেকেই বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় পড়েন। তাই এই আর্টিকেলের মধ্যে আমি প্রবাসী রেজিস্ট্রেশনের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।আমি প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আমি প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন
রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রথমে আপনার মোবাইলে আমি প্রবাসী অ্যাপ (Ami Probashi) ডাউনলোড করতে হবে। এরপর আপনার মোবাইল নম্বর, ভেরিফিকেশন কোড এবং আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য প্রদান করুন। এখানে আপনার একটি পাসওয়ার্ড সেট করে নিতে হবে। এরপর আপনার পাসপোর্ট এবং যোগ্যতার তথ্য দিয়ে বিএমইটি (BMET) রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করতে হবে।
আরো পড়ুন: অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন করে সহজেই সার্টিফিকেট হাতে পান
সর্বোচ্চ ৩ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করুন। রেজিস্ট্রেশন ফি জমা না দেওয়া পর্যন্ত পরবর্তি ধাপে কিছু করতে পারবেন না। নিচে আমি প্রবাসী অ্যাপ এর মাধ্যমে বিএমইটি (BMET) রেজিস্ট্রেশন ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো।
কীভাবে আমি প্রবাসী অ্যাপ ডাউনলোড করবেন
প্রথমে আপনার মোবাইল থেকে গুগল প্লে-স্টোরে প্রবেশ করুন। এরপর সার্চ অপশনে গিয়ে Ami Probashi লিখে সার্চ করুন। এরপর ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন।
মোবাইল ভেরিফিকেশন ও পাসওয়ার্ড সেট: আপনার মোবাইল থেকে আমি প্রবাসী অ্যাপ ওপেন করুন। এরপর আপনার মোবাইল নম্বর দিয়ে পরবর্তি বাটনে ক্লিক করুন। আপনার প্রদানকৃত মোবাইল নম্বরে মেসেজ এর মাধ্যমে একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে। কোডটি সাবমিট করে ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ করুন।
দক্ষতা ও ব্যাক্তিগত তথ্য দিন: এই অংশে আপনাকে প্রথমে কমপক্ষে ৩টি দেশ নির্বাচন করতে হবে। আপনার কোন কোন দেশে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে সেই অনুযায়ী দেশ সিলেক্ট করুন। আপনি চাইলে অনেকগুলো দেশ সিলেক্ট করতে পারেন। এরপর পরবর্তি বাটনে ক্লিক করুন।
এখানে আপনার দক্ষতা অনুযায়ী আপনি কোন কোন কাজ পারেন তা সিলেক্ট করতে হবে। আপনি বিদেশে গিয়ে যে ধরণের কাজগুলো করতে পারবেন তা সিলেক্ট করুন। পরবর্তি বাটনে ক্লিক করে আপনার ব্যাক্তিগত কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে। এখানে আপনার বয়স, যোগ্যতা, বর্তমানে কোন দেশে কর্মরত আছেন কি না। আপনার বিএমইটি স্মার্ট কার্ড আছে কি না তা প্রদান করে সম্পূর্ণ বাটনে ক্লিক করুন।
এরপর আপনাদের সামনে একটি পপ-আপ ছবি আসবে এখানে ঠিক আছে বাটকে ক্লিক করুন। যদি আপনার পূর্বেই BMET কার্ড থাকে তাহলে নতুনেভাবে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন নেই।
বিএমইটি (BMET) রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম
বিএমইটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য সর্বোপ্রথম আমি প্রবাসী অ্যপ এ প্রবেশ করুন। এরপর বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করুন। এরপর আপনি কোন দেশে যেতে চান তা সিলেক্ট করে পরবর্তি বাটনে ক্লিক করুন। এরপর পাসপোর্ট স্ক্যান করুন বাটনে ক্লিক করে আপনার পাসপোর্ট স্ক্যান করুন।
১. পাসপোর্ট এর তথ্য দিন
পাসপোর্ট স্ক্যান করুন বাটনে ক্লিক করার পর আপনি সরাসরি স্ক্যান করতে পারবেন অথবা ছবি তুলে আপলোড দিতে পারবেন। আপনার পাসপোর্ট স্ক্যান সম্পূর্ণ হলে পাসপোর্ট নম্বর বসে যাবে। এরপর আপনার পাসপোর্ট অনুযায়ী বাকি তথ্য প্রদান করুন।
২. ব্যাক্তিগত তথ্য দিন
এই অংশে আপনার ব্যাক্তিগত সকল তথ্য প্রদান করতে হবে। আপনার নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম ইত্যাদি সহ প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো প্রদান করুন।
৩. যোগাযোগের তথ্য দিন
এই অংশে আপনার যোগাযোগের সকল তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে। এখানে আপনার মোবাইল নম্বর, ইমেইল অ্যাড্রেস এবং স্থায়ী ঠিকানা প্রদান করুন।
৪. নমিনির তথ্য দিন
এখানে আপনাকে আপনার আত্নীয়স্বজন বা পরিচিত যে কোন একজনের তথ্য প্রদান করতে হবে। আপনার সাথে নমিনির সম্পর্ক, নমিনির নাম, নমিনির পিতার নাম, মাতার নাম, নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নমিনির মোবাইল নম্বর।
৫. জরুরী যোগাযোগ তথ্য এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণ
এখানে আপনার জরুরী যোগাযোগ এর তথ্য হিসেবে যার তথ্য দিবেন তার সাথে আপনার সম্পর্ক সিলেক্ট করুন, তার নাম প্রদান করুন এবং তার মোবাইল নম্বর প্রদান করুন। পরবর্তি বাটনে ক্লিক করে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রদান করুন।
৬. আবেদন ফর্ম সাবমিট করুন
এখানে আপনার ভাষাগত যোগ্যতা প্রদান করুন। আপনি কোন কোন ভাষায় পারদর্শি তা সিলেক্ট করুন। একাধিক ভাষায় পারদর্শি হলে পর্যায়ক্রমে ভাষা সিলেক্ট করুন। এরপর আপার সামনে একটি নোটিফিকেশন আসবে আপনি চাইলে আপনার প্রদানকৃত সকল তথ্য যাচাই করতে পারবেন। যাচাই করুন বাটনে ক্লিক করুন অথবা পরবর্তি বাটনে ক্লিক করুন। আপনার পাসপোর্ট যাচাই করতে ৩দিন সময় লাগতে পারে। এরপর ঠিক আছে বাটনে ক্লিক করুন।
৭. রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করুন
৩দিন পর পুনরায় আমি প্রবাসী অ্যাপ ওপেন করুন এবং আবেদন প্রক্রিয়াধীন অপশনে ক্লিক করুন। এরপর পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন এর জায়গায় ভেরিফাইড দেখালে পেমেন্ট করুন বাটনে ক্লিক করুন। বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে ৩০০ টাকা পেমেন্ট করে আপনার রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করুন।
এরপর আপনার সামনে একটি নোটিফিকেশন এর মাধ্যমে দেখানো হবে আপনার রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ হয়েছে। আপনি চাইলে আপনার রেজিস্ট্রেশন কার্ড এর অনলাইন কপি ডাউনলোড করে রাখতে পারবেন। ওপরে ডান সাইডে ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে আপনার বিএমইটি কার্ড ডাউনলোড করুন।
লেখকের মন্তব্য
বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক মানুষ প্রবাস জীবনে দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে রয়েছে। নতুনভাবে যারা বিদেশে যেতে চাইছেন তারা যেন কোন দালালের প্রলোভনে পড়ে প্রতারিত না হয় এই কারণে আমি প্রবাসী অ্যাপ লঞ্চ করা হয়েছে। আমি প্রবাসী অ্যাপ এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে কীভাবে বিদেশে যাওয়া যায় তা নিয়ে এই আর্টিকেলের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
comment url