বাসায় দেশি মুরগি পালন করার বিভিন্ন পদ্ধতি

বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারত্বের সংখ্যা অনেক বেশি। অনেকেই লেখাপড়া শেষ করে চাকরি না পেয়ে বাসয় বসে আছে। তবে বর্তমানে নিজের বাসায় দেশি মুরগি পালনের মাধ্যমে অনেকেই তাদের বেকারত্ব দূর করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু অনেকেই জানেন না বাসায় কীভাবে দেশি মুরগি পালন করতে হয়।তাই আজকে এই আর্টিকেলের মধ্যে বাসায় দেশি মুরগি পালনের পদ্ধতিসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি বাসায় দেশি মুরগি পালন করতে চান তাহলে নিচের পয়েন্টগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। 

দেশী মুরগী পালন ও চিকিৎসা 

বর্তমানে মুরগি পালন অনেক লাভজনক একটি ব্যাবসা। তাই অনেকেই বাসায় দেশি মুরগি পালন করতে চাইছে। কিন্তু বাসায় দেশি মুরগি পালন সম্পর্কে কিছু না জানায় বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মূখীন হচ্ছেন। যেমন, মুরগি কি পদ্ধতিতে পালন করবেন, মুরগির চিকিৎসা কীভাবে করাবেন। বাসায় অনেক পদ্ধতিতে আপনি দেশি মুরগি পালন করতে পারেন। এবং একজন প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মুরগির চিকিৎসা করাতে পারেন। আপনি মুরগি পালনে দক্ষ হয়ে গেলে আর কোন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজে মুরগির চিকিৎসা করাতে পারবেন। 

মুরগি পালন পদ্ধতি কত প্রকার 

বাসায় মুরগি পালন অনেক লাভজনক একটি ব্যাবসা। এই কারণে সকলে বাসায় মুরগি পালন শেুরু করতে চাইছে। তবে অনেকেই জানেন না বাসায় কত প্রকার পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করা যায়। বাসয় মোট ৩ রকম পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করা যায়। এই ৩ রকম পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে: 

  1. লিটার পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে মুরগির ঘরে কাঠের গুড়া বা এই জাতীয় কিছু দিয়ে মুরগি পালন করা। 
  2. মাচা পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে মুরগির ঘর মাচা সিস্টেমে করতে হয় এবং এই পদ্ধতিতে মুরগি পালন করলে কোন ধরণের গুড়া দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। 
  3. খাচা পদ্ধতি: যারা মুরগি পালন করে ডিম পাড়া পর্যন্ত রাখতে চান তাদের জন্য এই পদ্ধতি। তাছাড়া এই পদ্ধতি সবাই অবলম্বন করে না। 

এই ৩ প্রকার পদ্ধতিতেই আপনি বাসায় মুরগি পালন করে লাভবান হতে পারেন। আপনাকে বেছে নিতে হবে আপনার জন্য কোন পদ্ধতিটি বেশি সুবিধাজনক। তবে আপনি যখন মুরগির বাচ্চা নিবেন তখন প্রথম ১৫ দিন বাচ্চার অনেক খেয়াল রাখতে হবে। মুরগির বাচ্চা যদি সঠিকভাবে না রাখা হয় তাহলে মুরগির বিভিন্ন ধরণের অসুখ হতে পারে। তাই নিচে মুরগির বাচ্চা পালন পদ্ধতি সম্পর্কে  আলোচনা করা হলো। 

দেশি মুরগির বাচ্চা পালন পদ্ধতি 


নতুন যারা মুরগি পালন শুরু করেন তাদের মধ্যে অনেকেই একটি ভুল করে থাকেন। একটি খামারে মুরগি ভালো হবে না খারাপ হবে তা নির্ভর করে মুরগির বাচ্চার যত্নের ওপর। একটি খামারে মুরগির বাচ্চা তোলার পর থেকে অন্তত ১৫ দিন পর্যন্ত আলাদা আবহাওয়ায় রাখতে হয়। দেশি মুরগির বাচ্চা ঠান্ডা আবহাওয়ায় থাকতে পারে না। তাই বাসায় দেশি মুরগির বাচ্চা পালনের জন্য প্রথমে আমাদের বাচ্চার জন্য বুডিং ঘর রেডি করতে হবে। নিচে দেশি মুরগির বাচ্চার বুডিং ঘর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। 

দেশি মুরগির বাচ্চার জন্য বুডিং ঘর তৈরি

দেশি মুরগির বাচ্চার জন্য বুডিং ঘর তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে বাচ্চার সংখ্যা অনুযায়ী গরের যে কোন এক যায়গায় গোল করে নিচে ধান বা কাঠের গুড়া দিতে হবে। এরপর চাটায় বা এই জাতীয় কিছু দিয়ে গোল করে ঘিরে দিতে হবে। এরপর দেশি মুরগির বাচ্চার জন্য ওপরে ব্রুডার দিতে হবে। কারণ দেশি মুরগির বাচ্চা ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। পর্যাপ্ত পরিমান তাপ না পেলে মুরগির বাচ্চার গ্রোথ হবে না। এছাড়াও বাইরের আলো বাতাস মুরগির বাচ্চার বুডিং ঘরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। 

১০০ দেশি মুরগি পালনের খরচ

বাসায় দেশি মুরগি পালনে যেমন লাভ আছে তেমন ব্যায় ও রয়েছে। ১০০ টি দেশি মুরগি পালনে অনেক টাকা ব্যায় করতে হয়। তবে মুরগির বাচ্চার দাম সব সময় এক থাকে না। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সবসময় মুরগির বাচ্চার দাম উঠা নামা করে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী মুরগির বাচ্চার দাম ৩৫ টাকা হিসাবে ১০০ মুরগির দাম পড়বে ৩৫০০ টাকা।

প্রতিটি মুরগি ৯০ দিন পর্যন্ত রাখলে খাদ্য খাবে গড় ৩ কেজি করে। বর্তমানে মুরগির খাদ্যের মূল্য ৭০ টাকা কেজি। ৯০ দিনে ১০০ টি মুরগি খাদ্য খাবে ৩০০ কেজি। ১০০ টি মুরগির খাদ্যের পিছনে ব্যায় হবে ২১০০০ টাকা। মুরগির চিকিৎসা খরচ, গুড়া এবং কারেন্ট বিল রয়েছে। বাসায় দেশি মুরগি পালন যেমন লাভজনক তেমন ব্যায়বহুল ব্যাবসা। এই কারণে সবকিছু জেনে বুঝে ব্যায় না করলে ব্যাবসায় লস হওয়ার চান্স বেড়ে যাবে। 

দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ বই

দেশি মুরগি পালনের জন্য বাংলাদেশে অসংখ্য প্রশিক্ষণ বই কিনতে পাওয়া যায়। তবে এর মধ্যে অনেক ভালো একটি বই হলো সঠিক পদ্ধতিতে মুরগি পালন ও খামার ব্যাবস্থাপনা। এই বইয়ের মধ্যে একটি আদর্শ খামার এবং মুরগি সম্পর্কে সকল কিছু বিস্তারিত দেওয়া আছে। এই বইটির মধ্যে যা যা থাকছে: 

  1. মুরগি পালন সম্পর্কে বেসিক বিষয়বস্তু। 
  2. মুরগির খামার তৈরির জন্য সকল নিয়ম। 
  3. বিভিন্ন মৌসুমে বা আবহাওয়ায় মুরগি পালন পদ্ধতি। 
  4. একটি মুরগি বাচ্চা থেকে ডিম পাড়া পর্যন্ত সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। 

মুরগি পালনের সুবিধা ও অসুবিধা

বাসায় মুরগি পালনে যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। বাসায় মুরগি পালন করে অনেক লাভবান হওয়া যায় এবং এই লাভের মাধ্যমে পারিবারিক ও নিজস্য আর্থিক সমস্যা দুর হয়। এছাড়াও বেকারত্বের  হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। মুরগির ডিম বিক্রি করে এক্সট্রা ইনকাম করা যায়। তবে মুরগি পালনে অনেক অসুবিধাও রয়েছে। 

মুরগির সঠিক গ্রোথ না হলে মুরগি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রি করা যায় না। মুরগির বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে আর্থিকভাবে অনেক লস এর সম্মূখীন হতে হবে। নিয়মিত খামার পরিষ্কার না করলে আশেপাশে অনেক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে। এছাড়াও বাসায় মুরগি পালনে আরো অনেক অসুবিধা রয়েছে। 

উপসংহার 

বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য বর্তমানে অনেকেই বাসায় মুরগি পালন শুরু করতে চাইছেন। তবে অনেকেই বাসায় মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু জানেন না। এই কারণে এই আর্টিকেলের মধ্যে বাসায় দেশি মুরগি পালন, দেশি মুরগি পালন ও চিকিৎসা, দেশি মুরগি পালনের পদ্ধতি এবং দেশি মুরগি পালন সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু আলোচনা করা হয়েছে।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

comment url