পটল চাষ পদ্ধতি - হাইব্রিড পটল চাষ

পটল বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। অনেকেই পটল চাষ সম্পর্কে জানতে অনলাইনে সার্চ করে থাকে। তবে পটল চাষ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না। পটল চাষের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। সঠিক নিয়মে পটল চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। 
আপনি যদি পটল চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। 

ভূমিকা

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজ করে। কৃষি জমিতে যেসকল শাক-সবজি চাষ করা হয় এর মধ্যে পটল অন্যতম। পটল চাষ করে চাষিরা অনেক লাভবান হয়ে থাকে। তাই বর্তমানে পটল চাষে কৃষকরা আগের তুলনায় অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। অনেকেই পটল চাষের সময়, পটলের চারা কোথায় পাওয়া যায়, পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায়, হাইব্রিড পটল চাষ পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চাইছেন। তাই এই আর্টিকেলের মধ্যে পটল চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

পটল চাষের সময়

বসন্ত ও গ্রীষ্মকাল হলো পটল চাষের জন্য আদর্শ সময়। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত পটলের বীজ বপন করা হয়। তবে কিছু কিছু অঞ্চলে মাটির গুণগতমান এবং আবহাওয়ার অনুযায়ী জুলাই-আগস্ট মাসেও পটলের চাষ করা যেতে পারে। তবে সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত পটলের বীজ বপন করার সবথেকে ভালো সময়।

পটলের চারা কোথায় পাওয়া যাবে

পটল চাষের জন্য সর্বপ্রথম পটলের চারা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। সুস্থ্য-সবল পটলের চারা বাছাই করে সেগুলো সংগ্রহ করে রাখা অনেক জরুরী। পটলের চারা বিভিন্ন যায়গায় পাওয়া যেতে পারে। সাধারণত যেসকল যায়গায় পটলের চারা পাওয়া যায় তা হলো:
স্থানীয় কৃষি বাজার: স্থানীয় কৃষি বাজার বা হাটে পটলের চারা বিক্রয় করা হয়। গ্রামের কৃষি বাজারে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পটলের চারা বিক্রি করে থাকে।
কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র: বিভিন্ন এনজিও বা সরকার কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পটলের চারা পাওয়া যায়।
নার্সারি: স্থানীয় নার্সারিগুলোতে পটলের চারা সহ বিভিন্ন ধরণের শক-সবজি ও ফল-মূলের চারা পাওয়া যায়।
কৃষি অফিস: স্থানীয় কৃষি অফিস থেকেও চারা সংগ্রহ করা যায়। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অধিনে বিনামূল্যে পটলের চারা পাওয়া যায়।
অনলাইন প্লাটফর্ম: বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে সকল ধরণের সবজির চারা বিক্রি করা হয়। সেখানে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় পটলের চারা অর্ডার করলে আপনার ঠিকানায় চারা পৌছে দিবে।

পটলের বীজ থেকে চারা উৎপাদন


পটলের বীজ থেকে চারা উৎপাদনের সঠিক নিয়ম জানা থাকলে অনেক ভালো মাণের চারা উৎপাদন করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল বীজ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বীজ নির্বাচন করার পরে বীজ শোধনের জন্য ১% বাভিস্টিন বা ক্যাপ্টান দ্রবণে ১৫-২০ মিনিট বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর মাটি নির্বাচন করে বীজতলা তৈরি করতে হবে। 

৩-৪ ফুট প্রসস্ত ও ১ ফুট গভির উচু বেড তৈরি করতে হবে। বেডের দৈর্ঘ আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী রাখতে পারেন। এরপর বীজতলায় ১ থেকে ১.৫ সে.মি গভীরে ২-৩ ইঞ্চি দূরত্বে বীজ বপন করে হালকা মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বীজ বপনের পর হালকা সেচ দিতে হবে। 

এরপর ৭-১০ দিনের মধ্যে বীজ থেকে চারা অঙ্কুরিত হবে। চারাগুলোতে যেন অতিরিক্ত সূর্যের তাপ না লাগে সেইদিকে লক্ষ রেখে ছায়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। ১৫-২০ দিন বয়স পরে হালকা ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। এরপর ২০-২৫ দিন বয়স হলে আপনি চারাগুলো মূল জমিতে নিয়ে চাষ করতে পারবেন।

পটল চাষ পদ্ধতি

পটল চাষ সাধারণত একটি প্রথাগত সবজি চাষ। ভালো ভাবে চাষ করতে পারলে অধিক ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সঠিক সময়ে যদি সঠিক নিয়মে বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ করা যায় তাহলে কৃষকরা অনেক ভালো ফলাফল পাবে। তবে পটল চাষের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। নিচে পটল চাষের সঠিক নিয়ম দেওয়া হলো:
মাটি প্রস্তুত: দো-আঁশ, বেলে-দো-আঁশ ও সুনিষ্কাশিত মাটি পটল চাষের জন্য উপযুক্ত। পটল চাষের ক্ষেত্রে মাটির pH এর মান ৫.৫ থেকে ৭.০ এর মধ্যে থাকলে ভালো হয়। উপযুক্ত মাটি ভালো ভাবে ২-৩ বার চাষ করে নিতে হবে। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য জৈব বা কম্পোস্ট সার দেওয়া যেতে পারে।
বীজ বপন: ৮-১০ ইঞ্চি গভীর গর্তি পটলের বীজ বা চারা রোপন করতে হবে। প্রতিটি সারি থেকে সারির দুরত্ব হতে হবে ৬-৮ ফুট এবং গর্ত থেকে গর্তের দূরত্ব হবে ২-৩ ফুট। ৭-১০ দিনের মধ্যে বীজ অঙ্কুরিত হবে।
সেচ: বীজ বা চারা লাগানোর সাথে সাথে ১ বাস সেচ দিতে হবে। এরপর মাটির আদ্রতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত সেচ দেওয়া দরকার। তবে অতিরিক্ত পানি যেন না জমে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
পুষ্টি ব্যাবস্থা: বীজ বপনের আগে মাটিতে ১০-১২ টন পচা গোবর বা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হবে। পরবর্তি ২ মাস এর মধ্যে ২-১ বার ইউরিয়া, ফসফেট ও পটাশ সার দিতে হবে।
গাছের যত্ন: নিয়মিত ফসলি জমির সকল আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। পটল গাছের জন্য ৫০-৬০ দিনের মধ্যে মাচা তৈরি করতে হবে। মাচার জন্য বাঁশ, কাঠ বা শক্ত কট ব্যাবহার করা যেতে পারে।
রোগবালাই ও প্রতিকার: পটলগাছে ভাইরাসজনিত কোন রোগ অথবা পাতা কোকড়ানো রোগ হতে পারে। যেকোন ধরনের রোগ দেখা দিলে সাথে সাথে কীটনাশক বা ফাংগিসাইড প্রয়োগ করতে হবে।
ফল সংগ্রহ: পটল গাছে ফল আসার ১০-১২ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। অতিরিক্ত পেকে গেলে পটল এর গুণগত মাণ কমে যায়। পটল চাষের ৭০-৮০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়।

পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায়


পটল চাষের পর বিভিন্ন উপায়ে ফলন বৃদ্ধি করা যায়। পটলের ফলন বৃদ্ধির জন্য আমাদের প্রথমে উচ্চ ফঠলশীল ও সুস্থ্য-সবল বীজ বাছাই করতে হবে। এরপর উপরক্ত নিয়ম অনুযায়ী মাটি নির্বাচন করে মাটির উর্বরতা বাড়ানোর জন্য পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে হবে।সময়মতো সেচ দিতে হবে এবং অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে তা নিষ্কাশনের ব্যাবস্থা করতে হবে।

সঠিক সময়ে সঠিক সার প্রয়োগ পুষ্টির যোগান দিতে হবে।মাচা তৈরি করার পরে গাছে ঠিকমতো আলো-বাতাস লাগছে কি না সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। পটল গাছে কোন ধরণের ভাইরাস জনিত রোগ হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কোন রোগের শঙ্কা দেখা দিলে সাথে সাথে কীটনাশক ব্যাবহার করতে হবে। পোকা-মাকড় থেকে গাছ এবং গাছের পাতাকে রক্ষা করার জন্য নিয়মিত বিষ দিতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত ফসলি জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

টবে পটল চাষ পদ্ধতি

টবে পটল চাষ অনেক সহজ এবং কার্যকরি একটি পদ্ধতি। যাদের ফসলি জমি নেই তারা বাসার ছাদে বা বাড়ির আশেপাশে যেকোন ফাকা যায়গায় এটি করতে পারেন। টবে পটলের চাষের জন্য প্রথমে আমাদের টব নির্বাচন করতে হবে। ১২-১৮ ইঞ্চি গভীর ও ১২-১৫ ইঞ্চি প্রশস্ত একটি টব নির্বাচন করুন। এই ক্ষেত্রে মাটির টব, প্লাস্টিকের কন্টেইনার বা কাঠের বক্স ব্যাবহার করতে পারেন। 

টবের চারিদিকে ড্রেনেজ হোল করতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি জমতে না পারে।এরপর সরাসরি টবের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে। তারপর মাচা হিসেবে একটি শক্ত ও উচা লাঠি পুতে দিতে হবে। তারপর উপরে উল্লিখিত নিয়মে পরিচর্যা করতে হবে। টবের ক্ষেত্রেও ৭০-৮০ দিন পর ফল সংগ্রহ করা যাবে।

হাইব্রিড পটল চাষ

হাইব্রিড পটল চাষ হলো একটি উন্নত পদ্ধতি। এটি সাধারণ জাতের তুলনায় ফলন বেশি দেয় এবং এটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে। হাইব্রিড পটল চাষের পদ্ধতি উপরে উল্লিখিত পদ্ধতির মতো একদন এক। হাইব্রিড পটল চাষের ক্ষেত্রে আমাদের শুধু হাইব্রিড জাতের বীজ সংগ্রহ করতে হবে। হাইব্রিড জাতের বীজ সংগ্রহ করে উপরক্ত পদ্ধতিতে চাষ করতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

আগের তুলনায় বর্তমানে পটল চাষের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে অনেকেই জানেন না কীভাবে পটল চাষ করতে হয়। পটল চাষের সঠিক পদ্ধতি না যানায় অনেকেই বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তাই এই আর্টিকেলের মধ্যে, হাইব্রিড পটল চাষ, পটলের পরিচর্যা, সেচ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং পটল চাষের যাবতীয় সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

comment url